সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নীলনদের সকল রহস্য উদ্ধার

নীলনদ এর সকল রহস্য উদ্ধার

 



     আফ্রিকা মহাদেশের একটি নদী নীলনদ,
চিত্র: নীল নদ   
এটি   বিশ্বের দীর্ঘতম নদী। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা এই   নীল নদের তীরে গড়ে উঠেছে
, নীলনদের পলি   আফ্রিকার মরুভূমি কেও উর্বর চাষাবাদের   উপযোগী করে তুলেছে। সুপ্রিয় জল, খাদ্য   চাষাবাদের জন্য হাজার হাজার বছর ধরে এই   অঞ্চলের মানুষ নদীর উপর অতিমাত্রায়   নির্ভরশীল। আজকে আমাদের এই পোস্টটিতে   জানবো পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী নীলনদ সম্পর্কে।

 

নীলনদের বহমান জায়গা:


  আমাদের পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নদী। নদীকে
কেন্দ্র করে সারা পৃথিবীতে গড়ে উঠেছে বহু মানব সভ্যতা এবং নগরী। দূরবর্তী জায়গা এবং অঞ্চল থেকে মানুষের জন্য পানি বহন করে নিয়ে আসে নদী। সেই প্রাচীন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আধুনিক সভ্যতা গুলো নদীর পাশে গড়ে উঠেছে। প্রতিটি নদীর ভৌগোলিক গতিপথ ও পানি প্রবাহের নিজস্ব ধরনের কারণে একটি নদীর সাথে আরেকটি নদীর ভৌগলিক তুলনা করা সহজ কাজ নয়। পানি প্রবাহের দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদী হলো আমাজন

, এবং নদীর উৎপত্তিস্থল এবং শেষ প্রান্তের দূরত্ব বিচারে সবচেয়ে বড় নদী হলো নীলনদ। নীল নদের দৈর্ঘ্য 6695 কিলোমিটার, অনেকে মনে করে নীলনদ হয়তো শুধু মিশরের নদী কিন্তু না নীলনদ তার চলার পথে আফ্রিকা মহাদেশের 11 টি দেশ অতিক্রম করেছে। দেশগুলো হলো মিশর, সুতান, দক্ষিণ সুতান, ইথিওপিয়া, উগান্ডা, কঙ্গো, কেনিয়া ,তানজানিয়া, দক্ষিণ ওগান্ডা, বুরুন্ডি, এবং ইরিত্রিয়া। নীলনদের দুটি উপনদীর রয়েছে শেত নীলনদ এবং নীলাভ নীল নদ। এ দুটি উপনদীর মধ্যে শেত নীলনদ বেশি দীর্ঘতম। শেত নীলনদ আফ্রিকার মধ্যভাগের রত অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়েছে। একটি সর্বদক্ষিণের অগান্ডা হয়ে উৎপন্ন হয়ে উত্তরের তানজানিয়া মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর অন্যদিকে ইথিওপিয়ার তারানাথ থেকে উৎপন্ন হয়ে নীলাভ নীলনদ পূর্বের সুতানের দিকে বয়ে গেছে। নীলনদের এই দুইটি উপনদী সুতানের রাজধানী খার্তুম এর কাছে মিলিত হয়েছে। নীল নদের গতিপথে বিশাল বদ্বীপ গঠিত করে বিশাল ভূমধ্যসাগরে গিয়ে পতিত হয়।

 

নীল নদের নাম বৈচিত্র:


  নাইল বা নীলনদ নামটি এসেছে নাহল শব্দ থেকে। যার অর্থ প্রবাহমান উপত্যকা। গ্রীক কবি হোমার তার লেখা মহাকাব্য ওটিসি তে নীলনদকে Egypt’s নামে অভিহিত করেছে। মিশরের বাইরে নীল নদের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর দেশ হলো সুতান। আর তাই


সুতানিছ দের কাছে একাধিক নামে পরিচিত আল নীল, আল বাহার, বাহর আল নীল, নাহার আল নীল । নীলনদের এমন কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পৃথিবীর অন্য কোন নদীর নেই। তার মধ্যে সবচেয়ে অবাক করা বৈশিষ্ট্যটি হলো যখন অন্যান্য সকল নদীর পানি কমে আসে, তখন নীলনদের পানি বৃদ্ধি পায়। এবং বিপরীতভাবে যখন অন্য সকল নদীর পানি বৃদ্ধি পায় তখন নীল নদের পানি কমে যায়। দক্ষিণ থেকে উত্তরে বয়ে চলা এই নদীটিসবচেয়ে উষ্ণতম সময়ে কিভাবে বন্যায় প্লাবিত হত। তা প্রাচীন গ্রিক, মিশরীয়দের কাছে ছিল এক অজানা রহস্য। নীলনদের উত্তরাংশ প্রায় মিশরের মরুভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মিশরের সভ্যতা প্রাচীনকাল থেকেই নীল নদের ওপর নির্ভরশীল। নীল নদের অববাহিকায় মিশরের অধিকাংশ শহর এবং জনগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। প্রাচীন মিশরের প্রায় সমস্ত সাংস্কৃতিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও নীল নদের তীরে গড়ে উঠেছে। আর তাই মিশরকে বলা হয় নীল নদের দানপ্রাচীন মিশরীয়রা সদা বহমান এই নদীর নামটি দিয়েছিঅরু বা ওরযার অর্থ কালো, এর কারণ হলো প্রতিবছর বন্যায় নীলনদ তার আশেপাশের অঞ্চলে কালো রঙের পলি বয়ে আনতো । তখন মনে হতো পুরো অঞ্চল অন্ধকারে ছেয়ে গেছে, সমৃদ্ধ এই কালো রঙের পলি মিশরকে উর্বর করে তুলত। এবং এই পলি আচ্ছাদিত ভূমিতেই মিশরীয়রা কৃষিকাজ এবং চাষ বাস করত। নীলনদের বন্যার কারণে অতি প্রাচীনকাল থেকেই মিশরের নীল গতিপথে অনেক বসতি গড়ে উঠেছিল।

 

নীল নদের বর্তমান অবস্থা:


  হাজার হাজার বছর ধরে বয়ে চলা নীল নদ দিনে দিনে শুকিয়ে যাচ্ছে। এমনকি 1969 সালে Aswan High Dam নির্মাণের পরে নীল নদে আর কোন বন্যা হয় না । কারণ এই বাঁধের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সেচকাজ ,কৃষিকাজ, বাসাবাড়িতে পানি পৌঁছানো মাধ্যমে নীলনদের প্রবাহ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কালের পরিক্রমায় অসংখ্য মানুষকে জীবিকার যোগান দিয়ে এলো আজ নিজেকে নিঃস্ব। বহু শতাব্দী ইতিহাস ধারণ করা এই নদীটি শুকিয়ে যাওয়ার কারণ, মিশরের অত্যাধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি। বর্তমানে মিশরের জনসংখ্যা প্রায় 10 কোটির কাছাকাছি। ধারণা করা হচ্ছে আগামী 50 বছরে দেশটির জনসংখ্যা বেড়ে প্রায় তিনগুণ হবে। আর এই মিশরের জনসংখ্যা 95 ভাগ লোক সরাসরি নীল নদের ওপর নির্ভরশীল। এবং তারা প্রায় নীলনদের কয়েক কিলোমিটার এর মধ্যেই বসবাস করে। এছাড়াও নীলনদ শুধু মিশরের নয় একটি আন্তর্জাতিক নদীর ওপর 11 টি দেশের অধিকার রয়েছে। এরমধ্যে সুতান ও মিশরের মত অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। মাথাপিছু পানির প্রাপ্যতা অনুসারে মিশর পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশ গুলোর একটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন বরাদ্দকৃত নাগরিকের মাথাপিছু পানির পরিমাণ বাৎসরিক 9800 ঘনমিটার।এবং মিসরের বরাদ্দকৃত নাগরিকের বাৎসরিক মাথাপিছু পানির পরিমাণ মাত্র 660 ঘনমিটার। এমন সময়ে নীলনদ সহ অন্যান্য দেশগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নীল নদের উপর পানির চাপ বেড়েছে বহুমাত্রায়।

পানি বন্টন:

   আফ্রিকার প্রায় 30 কোটি মানুষ নীল নদের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল। নীল নদের ওপর


পানি বন্টন এর জন্য নদী তীরবর্তী অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। নীল নদের পানি ব্যবহারে কে প্রাধান্য পাবে, তা নিয়ে হাজার 1969 সালে মিশর এবং সুতানের মধ্যে একটি চুক্তি সংঘটিত হয়। সে চুক্তি অনুসারে প্রতি বৎসর মিশর পাবে 55 দশমিক 5 বিলিয়ন ঘনমিটার এবং সুলতান পাবে 15 দশমিক 5 বিলিয়ন ঘনমিটার মিশরের নীলনদ বাহিত 80 শতাংশ পানি আসে ইথিওপিয়া থেকে।  সেই চুক্তিতেইথোপিয়া এবং অন্যান্য দেশগুলো কি পরিমাণ পানি পাবে তার কোনো উল্লেখ ছিল না। এর ফলে আফ্রিকার নীলনদ অববাহিকা জুড়ে দেশগুলো দিনদিন পানির চাহিদা বাড়ছে এবং বাড়ছে অসন্তোষ। বহু দশক ধরে চেষ্টার ফলে দেশগুলো কোন সহজ সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গঙ্গা ফড়িং (dragonfly) সম্পর্কে সকল তথ্য

গঙ্গা ফড়িং (DRAGONFLY)   আমাদের চারপাশে অনেক ধরনের পোকা মাকর আছে। যার কিছু কিছু আমাদের প্রচুর বিরক্তির কারণ হয়। কিন্তু আমরা যদি কৃতজ্ঞতার শহীত মনোযোগ দিয়ে এই পোকা গুলোর দিকে তাকাই। তাহলে আমরা দেখতে পাব সেখানে কিছু অসাধারণ পোকামাকড় রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল গঙ্গা ফড়িং। আমাদের আশেপাশেই এগুলো ঘুরে বেড়ায়। এগুলো সাধারণত জলাশয়ের পাশে পাওয়া যায়।কারণ সেখানে তারা ডিম পাড়ে এবং বংশ বিস্তার করে। গঙ্গাফড়িং ছয় মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।  কিন্তু এগুলো খুবই অসাধারণ প্রাণী। এই গঙ্গাফড়িং ডাইনোসরের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে। কারণ তার মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অভিযোজন ক্ষমতা। যা খুব কম প্রাণীর মধ্যে রয়েছে।আমরা আমাদের পরিবেশকে যে রূপে দেখতে পাই একটি গঙ্গাফড়িং একেবারে ভিন্ন রূপে দেখতে পারে। আমাদের চোখ পরিবেশ থেকে অল্প কিছু সংখ্যক রং-এর আলো গ্রহণ করতে পারে।কিন্তু একটি গঙ্গাফড়িং অসংখ্য রং তার চোখের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারে। সে একই সাথে সামনে এবং পিছনে দেখতে পারে। যা একটি অসাধারণ ব্যাপার। একটি মানুষ ৬০ ফেম পার সেকেন্ডে দেখতে পারে। এর মানে হচ্ছে কোনো কাজ যদি এক সেকেন্ডে সম্পাদ...

প্রজাপতি (Butterfly) বিশেষ বৈশিষ্ট্য !

 প্রজাপতি (BUTTERFLY) যেখানে প্রকৃতি মনোরম ফুলে ফুলে সাজানো। সেখানে দেখতে পাওয়া যায় প্রজাপতি । প্রজাপতি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। যা মানুষের মন আকর্ষণে সার্থক। প্রজাপতি দেখতে খুব সুন্দর হয়ে থাকে। এটি আকাশে বাতাসে কোমলভাবে ঘুরে বেড়ায়। যা দেখতে খুবই অসাধারণ! একটি প্রজাপতি সাধারণত 12 মাস বেঁচে থাকে। তার জীবন বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। একটি প্রজাপতি জীবনের প্রথম অবস্থায় ডিম থেকে একটি লার্ভা বের হয়। লার্ভা বিভিন্ন পাতা খেয়ে বড় হয়। এরপর এই লার্ভা একটি নিরাপদ স্থানে গিয়ে একটি কুকুন গঠন করে। এ কুকুন একটি নির্দিষ্ট সময় পর ফেটে একটি প্রজাপতির জন্ম হয়। একটি প্রজাপতি শরীর সাধারণত দশ ভাগে বিভক্ত থাকে। প্রজাপতির মাথায় দুটি আন্টি না থাকে।এছাড়াও তার মাথায় দুটি পুঞ্জাক্ষি রয়েছে যার মাধ্যমে সে দেখতে পায়। প্রজাপতির ৬টি পা রয়েছে। একটি সুর রয়েছে যার মাধ্যমে সে ফুল থেকে মধু গ্রহণ করে। একটি প্রজাপতির উড়ার সর্বোচ্চ গতি 30 মাইল প্রতি ঘন্টা। প্রজাপতি পৃথিবীর সকল নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে দেখা যায়। এটি বসন্তকালে বেশি দেখা যায় বাংলাদেশ এবং ভারতের। এই পোস্টটি কেমন লাগল তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানান...