সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র: প্রতিবাদে উত্তাল রাজধানীসহ সারা বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর সকল মুসলিম ফ্রান্সে মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ।

 মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র ফ্রান্সের কর্মকাণ্ড:

ফ্রান্সের ব্যঙ্গাত্মক সাপ্তাহিক শার্লি এবদো মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে আবার ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করতে যাচ্ছে।




আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, পত্রিকাটির পরবর্তী সংখ্যায় হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে প্রচ্ছদে ব্যঙ্গচিত্র করা হয়েছে।

ওই ব্যঙ্গচিত্রে মহানবী (সা.)-কে কান্নারত দেখানো হয়েছে। তাঁর মাথায় সাদা পাগড়ি। হাতে ধরা একটি লেখা। তাতে ফরাসি ভাষার লেখা ‘জে সুই শার্লি’।

পত্রিকাটি বলছে, এটি ‘সারভাইভার্স ইস্যু’। কাল বুধবার সংখ্যাটি প্রকাশিত হবে।

পত্রিকার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সংখ্যাটির ৩০ লাখ কপি ছাপা হবে। সাধারণত তারা ৬০ হাজার কপি ছাপে।

গত সপ্তাহে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে শার্লি এবদোর কার্যালয়ে হামলা চালায় তিন বন্দুকধারী। ওই হামলায় নিহত হন পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদকসহ আট সাংবাদিক, দুই পুলিশ সদস্য ও অন্য দুজন। ওই হামলার পর পত্রিকাটির এই নতুন সংখ্যা ছাপা হচ্ছে।

ওই ঘটনার পরের দুই দিন প্যারিসে আরও দুটি সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত হন পাঁচজন। এরপর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংহতি জানিয়ে গত রোববার দেশজুড়ে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ শোভাযাত্রা করে।

গত সপ্তাহের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর নিরাপত্তা জোরদার করতে নজিরবিহীন এক পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। ‘ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর’ জায়গাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ব্যঙ্গধর্মী শার্লি এবদো ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে। ওই সময় তারা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি ব্যঙ্গচিত্র পুনর্মুদ্রণ করলে মুসলিম বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরেও পত্রিকাটি মহানবী (সা.)-এর একটি অবমাননাকর ছবি ছাপে।




সমগ্র দেশজুড়ে বিক্ষোভ:


ফ্রান্সে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে ব্যাপক বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।


এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ফ্রান্সবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কুশপুতুল দাহ করেন এবং তার বিচার দাবি করেন। তারা ফ্রান্সের সঙ্গে সবধরনের সম্পর্ক ছিন্নের দাবি জানান।



বায়তুল মোকাররমকেন্দ্রিক সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটি হয় সমমনা ইসলামী দলগুলোর ব্যানারে। এতে নেতৃত্ব দেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী। মাওলানা মামুনুল হকসহ শীর্ষ ইসলামি রাজনীতিকরা এতে বক্তব্য দেন।


জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম থেকে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। এ সময় পল্টন ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শত শত সদস্য পল্টন এলাকায় অবস্থান নেন।



বিক্ষোভকারীরা ফ্রান্সের সবধরনের পণ্য বয়কট, দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিকসহ সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব উপস্থাপনের দাবিও জানান তারা। দাবিগুলো মানা না হলে পরবর্তী সময়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আরও বড় জমায়েতের ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা।


এদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।


চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলাম বিশাল বিক্ষোভ করেছে। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী। হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরী আগামী সোমবার ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে।


গত ১৬ অক্টোবর ফ্রান্সের একটি সড়কে শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে হত্যা করে এক তরুণ। ওই শিক্ষক ক্লাসে মহানবীর কার্টুন দেখিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তখনই শিক্ষকের ওপর হামলাকারী আবদৌলখ নামের ওই তরুণ ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এরপরই ইসলাম ধর্ম ও বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা.কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন বন্ধ করা হবে না বলে সাফ জানান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এমনকি বিশ্বনবীকে নিয়ে একটি বিতর্কিত কার্টুন দেখানোর জেরে খুন হওয়া ফরাসি শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে সম্মান জানাতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ম্যাক্রোঁ ইসলামিক বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। বলেন, এই বিচ্ছিন্নতাবাদ ফ্রান্সের মুসলমান সম্প্রদায়গুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।




মহানবী (সা.)-এর বিতর্কিত ছবি প্রদর্শনীর কারণে তুরস্ক, ইরানসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ফ্রান্সের নিন্দা ও সমালোচনা করছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও এখানকার জনগণ ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ইসলামবিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা ফ্রান্সের পণ্যসামগ্রী বর্জনের ডাক দিয়েছে। প্যারিস থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবনা পাস হয়েছে। বিশ্বের বেশির ভাগ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়। সৌদিতেও বর্জনের অন্যতম টার্গেটে পরিণত হয়েছে ফরাসি সুপার মার্কেট চেইন ক্যারেফোর। ফরাসি এই সুপারমার্কেট চেইনের পণ্য বর্জনের ডাক সৌদি আরবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ড হয়েছে। ভোক্তাদের এই মার্কেটের পণ্য কেনা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গঙ্গা ফড়িং (dragonfly) সম্পর্কে সকল তথ্য

গঙ্গা ফড়িং (DRAGONFLY)   আমাদের চারপাশে অনেক ধরনের পোকা মাকর আছে। যার কিছু কিছু আমাদের প্রচুর বিরক্তির কারণ হয়। কিন্তু আমরা যদি কৃতজ্ঞতার শহীত মনোযোগ দিয়ে এই পোকা গুলোর দিকে তাকাই। তাহলে আমরা দেখতে পাব সেখানে কিছু অসাধারণ পোকামাকড় রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল গঙ্গা ফড়িং। আমাদের আশেপাশেই এগুলো ঘুরে বেড়ায়। এগুলো সাধারণত জলাশয়ের পাশে পাওয়া যায়।কারণ সেখানে তারা ডিম পাড়ে এবং বংশ বিস্তার করে। গঙ্গাফড়িং ছয় মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।  কিন্তু এগুলো খুবই অসাধারণ প্রাণী। এই গঙ্গাফড়িং ডাইনোসরের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে। কারণ তার মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অভিযোজন ক্ষমতা। যা খুব কম প্রাণীর মধ্যে রয়েছে।আমরা আমাদের পরিবেশকে যে রূপে দেখতে পাই একটি গঙ্গাফড়িং একেবারে ভিন্ন রূপে দেখতে পারে। আমাদের চোখ পরিবেশ থেকে অল্প কিছু সংখ্যক রং-এর আলো গ্রহণ করতে পারে।কিন্তু একটি গঙ্গাফড়িং অসংখ্য রং তার চোখের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারে। সে একই সাথে সামনে এবং পিছনে দেখতে পারে। যা একটি অসাধারণ ব্যাপার। একটি মানুষ ৬০ ফেম পার সেকেন্ডে দেখতে পারে। এর মানে হচ্ছে কোনো কাজ যদি এক সেকেন্ডে সম্পাদ...

প্রজাপতি (Butterfly) বিশেষ বৈশিষ্ট্য !

 প্রজাপতি (BUTTERFLY) যেখানে প্রকৃতি মনোরম ফুলে ফুলে সাজানো। সেখানে দেখতে পাওয়া যায় প্রজাপতি । প্রজাপতি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। যা মানুষের মন আকর্ষণে সার্থক। প্রজাপতি দেখতে খুব সুন্দর হয়ে থাকে। এটি আকাশে বাতাসে কোমলভাবে ঘুরে বেড়ায়। যা দেখতে খুবই অসাধারণ! একটি প্রজাপতি সাধারণত 12 মাস বেঁচে থাকে। তার জীবন বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। একটি প্রজাপতি জীবনের প্রথম অবস্থায় ডিম থেকে একটি লার্ভা বের হয়। লার্ভা বিভিন্ন পাতা খেয়ে বড় হয়। এরপর এই লার্ভা একটি নিরাপদ স্থানে গিয়ে একটি কুকুন গঠন করে। এ কুকুন একটি নির্দিষ্ট সময় পর ফেটে একটি প্রজাপতির জন্ম হয়। একটি প্রজাপতি শরীর সাধারণত দশ ভাগে বিভক্ত থাকে। প্রজাপতির মাথায় দুটি আন্টি না থাকে।এছাড়াও তার মাথায় দুটি পুঞ্জাক্ষি রয়েছে যার মাধ্যমে সে দেখতে পায়। প্রজাপতির ৬টি পা রয়েছে। একটি সুর রয়েছে যার মাধ্যমে সে ফুল থেকে মধু গ্রহণ করে। একটি প্রজাপতির উড়ার সর্বোচ্চ গতি 30 মাইল প্রতি ঘন্টা। প্রজাপতি পৃথিবীর সকল নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে দেখা যায়। এটি বসন্তকালে বেশি দেখা যায় বাংলাদেশ এবং ভারতের। এই পোস্টটি কেমন লাগল তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানান...